কেমন আছো তুমি- এই প্রশ্নটা তোমায় করতে ইচ্ছে করে না তেমন। কারণ ধরেই নিয়েছি তুমি ভালো আছো, যে কোনো অবস্থায় তুমি ভালো থাকবে। তোমার আশেপাশে তোমার যত্ন নেয়ার মানুষের অভাব কখনো ছিলো না, এখনো নেই। তাই, তুমি ভালো আছো কি না, এই প্রশ্নটা কিছুটা যেনো অবান্তর মনে হয় আমার কাছে।

কি ভাবছো? তোমার প্রতি রাগ থেকে এই কথাগুলো আমি লিখছি?

তোমার প্রতি কখনোই আমি রাগ করতে পারি নি। আজও পারি না। কিভাবে রাগ করবো, যাকে ভালোবাসা যায়, তাঁর প্রতি অন্যার রাগ ধরে রাখার মানুষ যে আমি নই। তবে ঐ যে অভিমানটা, অভিমানের জায়গায় ঠিকই আছে। অভিমান খুব স্পর্শকাতর একটা অনুভূতি। এই পৃথিবীতে অল্প কিছু মানুষের সাথেই এটা করা যায়। কতটা দূরেই না আজ তুমি চলে গিয়েছো, ভাবতে অবাক লাগতো কিছুদিন আগেও। এখন তেমনটা মনে হয় না। খুব ব্যস্ত হয়েছি যে আজকাল, এই ভারী চিন্তাগুলোর সময়টা কোথায়...

ওরা মনে করে, পুরো ব্যাপারটাই আমার মনগড়া কিছু একটা, আমাকে ওরা বলে 'সত্যি কি এমন হয়েছিলো?'। আমি ওদের কিছুই বলি না, ওরা ধরে নেয়, সবই আমার কল্পনা, আমাকে সান্ত্বনা দেয়, বলে 'এবার সত্যি ওমন কিছু করে দেখা!'। ওরা জানে না, ওদের বলিও নি, বললে বিশ্বাস করবে না ওরা- কি সময়টাই না আমরা কাটিয়েছিলাম। স্বপ্নও হয়তো এতোটা সুন্দর হয় না। ওরা জানে না, একটা মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ মনে হয়েছিলো আমার। আমি নিশ্চিত, এই ধরাধামে ওইদিন ওই ক্ষণে আমার মতো সুখী মানুষ সম্ভবত দুটো ছিলো না। কোন সময়টা তুমি আন্দাজ করতে পারছো?... থাক, প্রয়োজন নেই।

এই পৃথিবীতে কেউই কারও জীবনে কোন কারন ছাড়া আসে না। তোমাকে তো আগেও বলেছি, আবারও বলছি- তুমি তোমার অজান্তেই কিছু একটা করে দিয়ে গিয়েছো, যেটা পরম শক্তি আমার জন্যে নির্ধারন করে দিয়ে গিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ যে, উনি তোমাকে পাঠিয়েছিলেন। আর এজন্যেই তুমি কখনোই সারাজীবনের জন্যে পাশাপাশি থাকতে আসো নি, সেই মহাপরিকল্পকের পরিকল্পনাটা বাস্তব করে দিয়ে নিরবে সরে গিয়েছো।

কিন্তু আমি যে মানুষ, সাধু-সন্ত নই। তাই যখন তোমাকে ছাড়াই থাকতে হবে বুঝতে পেরেছিলাম, আমার সামনে দুটো রাস্তা ছিলো- আর দশজন মানুষের মতো ভাগ্যকে অভিশাপ দিতে দিতে, নিজেকে বাদে পৃথিবীর সবাইকে নিজের অপ্রাপ্তির জন্যে দোষারোপ করতে করতে মহাকালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাওয়া; অথবা নিজের অন্তর্মূখী দানবের সাথের চিরকালের যুদ্ধে নামা, নিজের ভেঙে টুকরো টুকরো করে নতুন করে তৈরি করা। দ্বিতীয় আরেকবার এই পৃথিবীতে জন্মাতে পারলে হয়তো তোমাকে না পাওয়ার শোক দিবস যাপন করতে করতে এক জীবন পার করে দেয়া যেতো। কিন্তু সেই বিলাসিতা করার উপায় নেই যে।

আর তাই, অভিমানগুলো সব আজও বেঁচে আছে। আমিও হয়তো অন্য কোনো ঠিকানায় থিতু হবো, তবে তাতে করে তোমার অভিমানগুলোতে এতোটুকু আঁচড় পড়বে না।

আমাদের আবার দেখা হবে। যথাসময়ে। আমি নিশ্চিত।