একজন হুমায়ূন - ০১
টানা অনেক দিন অফিস-বাসা করতে করতে একঘেয়েমি চলে এসেছিলো। তার চেয়েও বড় ব্যাপার অনেকদিন বইপত্র কিছু কিনি নি। আর এই জিনিস বেশি দিন না কিনে থাকলে আমার শ্বাসকষ্টের মতো হয়- হ্যাঁ, অনুভূতিটা শারীরিক নয় কিন্তু মানসিক। গতকাল অফিস ছুটির পর তাই বাসার জন্যে গাড়িতে না উঠে কাওরানবাজার থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাতিঘর চলে আসলাম। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে হুমায়ূন আহমেদ সেকশানের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম।
হুমায়ূন আহমেদ এর বই কেনার যে সমস্যা আমার হয় তা হলো সিদ্ধান্তহীনতা। একটা বইয়ের নাম হয়তো অপরিচিত লাগছে, কিন্তু কয়েকটা পাতা উল্টে বইয়ের কাহিনী কি চরিত্রগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে নিতেই বুঝে যাই এই বই পড়া হয়েছে... হয়তো। তারপর ইতস্তত করে শেলফে রেখে দিই। হিমু আর মিসির আলী সিরিজ বাদে অন্য বইগুলোর ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটা আমার ঘটে। তবু কি মনে করে সেদিন কয়েকটা বই কেনা হলো। কিন্তু আজ যে তাঁর জন্মদিন, তা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি সাধারনত কোনো লেখকেরই পাড় ভক্ত নই। একটা সময় হয়তো ছিলাম, কিন্তু জানা এবং তাঁর চেয়েও না জানার বিস্তৃতি দিন দিন এমনভাবে বেড়ে চলেছে, নির্দিষ্ট কারও উপর একতরফা মুগ্ধতা ধরে রাখার ব্যাপারটা যেনো আসে না। এইজন্যেই কেউ আমাকে প্রিয় লেখক কে জিজ্ঞেস করলে আমি এক কথায় কোনো উত্তর দিতে পারবো না মনে করি।
কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এরকম বিশেষ একটা জায়গা কি করে দখল করলেন?
ভক্ত নিন্দুক নির্বিশেষে সকলেই স্বীকার করতে চাইবে যে, হুমায়ূনের লিখা পড়তে কষ্ট হয় না। এতো সাবলীলতা নিয়ে খুব বেশি লেখক বাংলা সাহিত্যে আসেননি। আর সে অল্প কয়েকজনের ভেতরেও হুমায়ূন আহমেদ আছেন অনন্য এক উচ্চতায়। তাঁকে অনুকরনের চেষ্টা করেছে এবং করে যাচ্ছে কেউ কেউ। তবে অনুকরনে আরেকজন হুমায়ূন আসবেন না। তবে তাদের আমি ঠিক দোষ দিতে পারি না। যে প্রবল টানে তিনি পাঠকে তাঁর জগতের সাথে ধরে রেখেছিলেন ত্রিশ বছরেরও বেশি সময়, সে প্রবল আকর্ষন উপেক্ষা করা বেশ কঠিন।
লেখক হুমায়ূন যতো বিখ্যাত, ব্যক্তি হুমায়ূন যেনো ঠিক তেমনটাই বিচিত্র, আলোচিত এবং সমালোচিত। কিছু মানুষ নিজের ভেতর রহস্যময় ভূবন তৈরি করতে চায়, কিন্তু সংসার-ধর্ম তাঁকে আরেকটা নির্জীব প্রানীতে পরিনত করে মাত্র। হুমায়ূন আহমেদ সে হাতে গোনা মানুষদের একজন, যিনি নিজের ভূবন তৈরি করতে পেরেছিলেন নিজের মতো করে।
অনেক কথাই তাঁকে নিয়ে লেখা যায়, লিখা হবে। পোস্টের শিরোনাম তাই নম্বরযুক্ত।
হুমায়ূন আহমেদ, শুভ জন্মদিন আপনাকে। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।