দিন প্রতিদিন - ০৪
একজন দক্ষ লেখক প্রতিদিন নিয়ম করে লিখবেন। লিখাটা তাঁর কাছে নেশা পেশা দুটোই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, লিখা না আসলেও সাদা পৃষ্ঠার সামনে লেখকের বসে থাকা উচিত। কারনটা স্বাভাবিক; লিখা প্রতিদিন আসে না, আসলেও লিখতে অনেক সময় ইচ্ছে করে না। তবু লিখার উপকরন নিয়ে বসে থাকতে হয়।
আমি লেখক নই। লিখাটা আমার জন্যে সেরকম বাধ্যতামূলক নয়, তবু প্রতিদিন আমি কিছু না কিছু লিখতে চেয়েছি- এবং ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থ হবার কারন অলসতা ছাড়া অন্য কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে এতোদিনে এইটুকু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি, লিখাটা আমার জন্যে একটা বড় রকমের comfort zone, মনের ভেতরের এলোমেলো অবস্থা স্থিত করতে, কাউকে বিরক্ত না করে আমি এই একটা জায়গায় এসে নিজের মতো করে কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারি। আমার ধারনা, এটা গড়পড়তা অনেকের জন্যেই সত্যি।
এই ব্লগের উদ্দেশ্য নিজের কথাগুলোকে ভাষায় রূপ দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখা, অন্তর্জালে কেউ ভুল করে এখানে চলে আসতে পারে বিধায় বানান ভাষারীতির দিকে একটু নজর হয়তো রাখতেই হয়, কিন্ত আমার এই লিখার বেশিরভাগ আমার নিজের চিন্তাভাবনা প্রসূত লিখা হবে। হ্যাঁ, ফেসবুক তো আছে, সেখানে লিখাগুলো পড়ার দর্শকও আছে, লাইক, কমেন্ট পাবার মতো ব্যাপার আছে। খুব বেশি মানুষ এখনো একটা URL টাইপ করে এই ব্লগে এসে কোনো লিখা পড়ার কষ্টটুকু করবে না, আর এখানেই আমার স্বস্তি। কারন, আমার এই লিখাগুলো একান্তই ব্যক্তিগত, তবু যেনো প্রকাশ হতে চাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে বলে এই ব্লগে চলে এসেছে।
একটা সময় চিঠি লিখতাম। কারও সাথে যোগাযোগের জন্যে চিঠি লিখার মতো অসাধারণ ব্যাপার খুব বেশি নেই। আজকাল সে কাজটা আবার করতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছের অপূর্নতা এই ব্লগ হয়তো কিছুটা পূরণ করবে।
মহামারির জন্যে এই দেশে এখন এই মুহূর্তে লকডাউন চলছে। গত বছরেও এই সময়ে লকডাউনে থাকতে হয়েছে, তখনই বুঝতে পেরেছি, পরিচিত প্রিয় মানুষদের সাথে মুখোমুখি দেখা না হবার, কথা না হবার যন্ত্রনা কতটুকু। কিন্তু তাই বলে বসে থাকাও তো নিরর্থক। তাই গত বছর থেকেই এভাবে লিখালিখির উদ্যোগ নিয়েছিলাম, আবশ্যক-অনাবশ্যক ব্যস্ততায় সে লেখায় বারবার ছেদ পড়েছে। তাই আবারো নিজের কাছে 'প্রতিদিন লিখবো' টাইপ কথা দিয়ে নতুন করে শুরু করছি- যেমন করে অনেক কিছুই নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে।