দেখতে দেখতে আরেকটা শনিবার চলে গেলো। একটা সময় ছিলো, শনিবারের দিনগুলো শুরু হতো মোবাইলটা এরোপ্লেন মোডে দিয়ে। কারন পরিচিত, অপরিচিত কারও ফোন ধরার ইচ্ছে আমার হতো না। চাইতাম না, এইদিন কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করুক। কারনটা আর কিছুই না, কাজের কথা, চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়ার কথা, সংসারের নিত্যদিনের একঘেয়ে ঘটনা শুনতে শুনতে, দেখতে দেখতে, অফিসে যাওয়ার পথে, আসার পথে টিকে থাকার সংগ্রামে ক্লান্ত, শ্রান্ত, বিরক্ত, তবু আশান্বিত, ব্যস্ত মানুষদের দেখতে দেখতে যেনো হাঁপিয়ে উঠতাম। তাই একটা দিন নিজের জন্যে রেখে দিতে পছন্দ করতাম।

ব্যস্ত রাখতাম নিজেকে বইয়ের মাঝে। মাঝে মাঝে একটু মেইল চেক করা, দুয়েকটা আর্টিকেল পড়া, তারপর আবার হাতের কাছে থাকা বইটায় ডুবে যাওয়া। বের হতাম সন্ধ্যের পর। পৃথিবীর কাছে নাম পরিচয়হীন নিজেকে এই দিনের দিনের আলোয় মানুষের মাঝে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করতো না। তাই সন্ধ্যের পর বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতাম বাড্ডা লিংক রোড ধরে। কখনো কোনো একটা গলির রাস্তা ধরে এক মনে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতাম কোন এক জায়গায়। হ্যাঁ, ব্যস্ত মানুষগুলো তখনো থাকতো, কিন্তু এইদিন কোনো কিছুই আমাকে যেনো স্পর্শ করতো না। নিজেকে ভেতর থেকে মুক্ত করে দেয়ার চেষ্টা করতাম। আর তখনই টের পেতাম গৎবাঁধা চিন্তার শৃঙ্খলে কতটা আটকে আছি, টের পেতাম চারপাশের পরিবেশটা কিভাবে আমাকে প্রতিমুহূর্তে প্রভাবিত করে যাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে ছটফট করতাম, নগর থেকে দূরে যাবার জন্যে, কিন্তু নিজের সীমাবদ্ধতা আমায় আটকে রাখতো, বলতো, ওই অল্পক্ষনের মুক্তির খোঁজের চেষ্টা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। কিন্ত ভীতু মনের ভেতরেও আরেকটা সত্ত্বা অনুভব করতাম, এখনো করি, যে এই সবকিছুতেই বিদ্রোহ প্রকাশ করে, কিন্তু অন্তর্মুখী দানবের কাছে প্রতিবারই হেরে যায়...।

না, আমি এখন অন্য কোথাও থাকি তা নয়। শনিবারটা হয়তো আগের চেয়ে এখন ব্যস্ত হয়েছে, অথবা আমিই এটাকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে যাই, কিন্তু মনের ভীতি দূর হয়নি আজও, তাই আজও আটকে থাকার অনুভূতিটা হয়।