রোড নং ২৩, বনানী, ঢাকা

রাত ৮ঃ১৫


"...এই দিকটাতেই মামা ফুচকা নিয়ে বসে তো!" বলে আমার দিকে স্বভাবমতো চোখ বড় বড় করে তাকালো সে।

বললাম, "আজ শুক্রবার। ছুটির দিনে এই সময়ে এই দিকটায় তো ভীড় হবে না সেরকম, মামা বসলেও আজ তো আসার কথা না। আর আসলেও এখন থাকার কথা না"...

সে "হুঁহ" বলে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাতের ছোট্ট হ্যান্ড ব্যাগটা দোলাতে লাগলো আনমনে। একটু পর বললো, "কিন্তু ফুচকা আমি খাবোই, মাথায় ঢুকে গেছে। খেতে হবে খেতে হবে!"

বললাম, "বেশ, রাস্তার মোড়ে গিয়ে রিকশা নিচ্ছি, শাহী তে যাবো, কেমন?"

সে "হুঁ" বলে চুপ করে গেলো।

দুজন পাশাপাশি হাঁটছি বেশ কিছুক্ষন হয়েছে। বনানীর ভেতরের রোডগুলোতে এমনিতে তেমন কোলাহল থাকে না, ছুটির দিন হওয়াতে একদমই কেউ নেই এই মুহূর্তে। খেয়াল করলাম, দূরে রাস্তার মোড় কেটে গাড়িগুলো চলে যাচ্ছে, মাঝখানের শুনশান রোডটায় শুধু আমরা দুজনই হাঁটছি। তখনই ঘটনাটা ঘটলো...

আমার হাঁটার পথ রোধ করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেলো সে, আমাকে বললো-

আপনার ডান হাতটা উঁচু করেন তো!

কেন?

একটু চোখ রাঙিয়ে সে বললো, "করেন বলছি!"

আমি ডান হাতটা শপথ নেয়ার ভঙ্গিতে উঁচু করলাম। সে আমার হাতটা আরেকটু উঁচুতে তুলে ধরে বললো, "এবার আঙুলটা"। তখনো কিছুই না বুঝতে পারা আমি আলগোছে তর্জনী আঙ্গুল সামনে তাক করলাম।

তারপর সে আমার আঙুলটা ধরে নিজেকে ঘুরিয়ে টার্ন ড্যান্স শুরু করলো।

ঘুরছিলো, আর প্রাণখোলা হাসি হাসছিলো সে। আমার সাথে সাথে তেইশ নম্বর রোডের দুপাশের বৃক্ষগুলোও অবাক হয়ে ওকে দেখছিল।

চার কি পাঁচ বারের সময় "মাথা ঘুরাচ্ছে", বলে উঠলেও থামেনি মেয়েটা, কিন্তু ওর সাথে সাথে ঘুরতে থাকা কাঁধের বেরসিক হ্যান্ডব্যাগটা এবারে ধপ করে আমার পেটে গিয়ে লাগলো।

"উহ" করে উঠতেই তাড়াতাড়ি থেমে গিয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে নিজেকে স্থির করতে করতে ও জিজ্ঞেস করলো, "লেগেছে?"

আমি পেটে হাত বুলোতে বুলোতে বললাম, "না, তেমন লাগে নি।"

কিছু মুহুর্ত পর আমার কাঁধ ছেড়ে দিয়ে সোজা হলো সে। দুজনে আবার হাঁটতে লাগলাম। ও মৃদু কন্ঠে বললো, "কেনো যেনো ইচ্ছে করলো এটা করতে।"

ওর দিকে তাকালাম। দৃষ্টি বুঝতে পেরে ফিরে তাকিয়ে মুহূর্তেই আমার চোখের ভাষা পড়ে ফেললো, বললো, "না...অমিয়র সাথে এটা কখনো করি নি।"

হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মোড়ে চলে এসেছি দুজনে। পথটুকু দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে গেলো যেনো...