হিস্টোরিক্যাল ফিকশন আমার পছন্দের জনরা- এই ব্যাপারটা প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'প্রথম আলো' উপন্যাস পড়ার পর।

বেশ কয়েকমাস ধরে রিডার্স ব্লকে থাকার পর খুঁজে পেয়েছিলাম এই বইটা। আরো অনেক না পড়া বইয়ের ভেতর আড়াই বছর আগে বাতিঘর থেকে কিনে আনা বইটা চুপ করে বসেছিলো। পড়া শুরু করে কিছুদূর যাওয়ার পরেই বুঝলাম এরকম হিস্টোরিক্যাল ফিকশানই এখন দরকার ছিলো আমার।

পরমাণুর আবিষ্কার,পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার,জাপানের দুটো শহরে সেই বোমার ব্যবহার এবং তথাকথিত বিশ্বাসঘাতক 'ডেক্সটার'এর মাধ্যমে সেই আবিষ্কারের ফর্মুলা তৎকালীন সোভিওয়েত ইউনিয়নে পাচারের রোমাঞ্চকর বর্ণনায় এক অনন্যসাধারণ মাস্টারপিস তৈরি করেছেন নারায়ন সান্যাল। 

বাস্তব ঘটনা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়- এই বইটি তা নতুন করে উপলদ্ধি করাবে।   আইনস্টাইন, রাদারফোর্ড, নীলস বোহর, অটো হান, কুরি দম্পতি, রিচার্ড ফাইনম্যান, ফার্মি, জিলার্ড, হাইজেনবার্গ, ওপেনহাইমার, রুজভেল্ট, চার্চিল, হিটলার, স্তালিন- কে নেই এই বইতে?

বইয়ের শুরুর দিকেই পরমাণু মডেল নিয়ে কিছু কথা আছে, যে কারওরই সেখানে এসে মনে হতে পারে "উপন্যাস পড়তে এসে পরমাণুর মডেল পড়তে হচ্ছে কেনো!"- কিন্তু ধৈর্য ধরে এই অংশটুকু পড়লে পাঠকেরই লাভ হবে, বোঝা যাবে কেন এবং কিভাবে পরমাণুর শক্তিকে উন্মুক্ত করা হয়েছিলো।

বই প্রচ্ছদ

উপরের শেষ বাক্যটা আজ এই ২০২২ সালে এসে আমরা হয়তো খুব সহজে লিখতে পারবো। কিন্তু পারমাণবিক শক্তিকে উন্মুক্ত করতে মানুষকে পার হয়েছে অত্যন্ত কঠিন কিছু জায়গা, এতোটাই কঠিন যে সে সময় রাদারফোর্ড, নীলস বোহর, অটো হান আর আইনস্টাইনদের মতো বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন এই শক্তিকে কখনোই জয় করা যাবে না- অন্তত তাদের জীবদ্দশায় নয়। 

কিন্তু মানুষের উচ্চাকাঙ্খার কাছে অসম্ভব কাজ সম্ভব হয়েছে, ইতিহাসের এই ঘটনার নজির একটা নয়। পরমাণুর শক্তির ক্ষমতার উন্মোচন নতুন করে আবারও তা প্রমানিত হয়েছিলো। 

অসম্ভব রকমের গোপনীয়তা সত্ত্বেও আমেরিকা এই বোমা বানানোর ফর্মূলা গোপন রাখতে ব্যর্থ হয়, পাচার হয়ে যায় কমিউনিস্ট রাশিয়াতে। 

কিভাবে পাচার হয়েছিলো সেই ফর্মুলা, কিভাবে এফ বি আই নজর রাখা শুরু করেছিলো বিজ্ঞানীদের উপর এবং সবশেষে কে এই 'বিশ্বাসঘাতক',যে কিনা নিজ থেকেই ধরা দিয়েছিলো আমেরিকানদের কাছে- জানতে হলে বইটি অবশ্যপাঠ্য।